ধর্ম ও জীবনসর্বশেষ খবর

আহার গ্রহণের ক্ষেত্রে ইসলামী নীতি, পদ্ধতি ও পরিমাণ

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক, সুখবর ডটকম: আমাদের প্রিয় নবী (সা.) আমাদের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত দয়াপরবশ। খুঁটিনাটি ছোট-বড় সব বিষয়ে তিনি আমাদের গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। ওমর ইবনে আবু সালামা (রা.) বলেন, আমি ছোটবেলায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খিদমতে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত ছোটাছুটি করত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বলেন, হে বৎস, ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে আহার করো এবং তোমার কাছের থেকে খাও। এরপর থেকে আমি সব সময় এ নিয়মেই খাদ্য গ্রহণ করতাম। (অর্থাৎ নিজের সামনে থেকে আহার গ্রহণ করতাম)। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩৭৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের খাবার গ্রহণের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছেন। তাতে আমাদের পার্থিব এবং পরকালীন কল্যাণ আছে। নিম্নে আমরা খাবার গ্রহণের শিষ্টাচার নিয়ে আলোচনা করব।

আহার-পূর্ব শিষ্টাচার-

এক. খাবারের আগে হাত ধোয়া। এর দ্বারা হাতে লেগে থাকা ময়লা ইত্যাদি দূর হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, খাওয়াদাওয়ার আগে ও পরে অজু করার মধ্যেই বরকত আছে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৮৪৬)

দুই. মাটিতে দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার রাখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) দস্তরখানে বসে খাবার খেতেন। আর এভাবে খাবারের মাঝে আল্লাহর প্রতি বিনয় প্রকাশ পায়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো ‘খিওয়ান’ (টেবিলের মতো উঁচু স্থান)-এর ওপর খাবার রেখে আহার করেননি এবং ছোট ছোট বাটিতেও তিনি আহার করেননি। আর তাঁর জন্য কখনো পাতলা রুটি তৈরি করা হয়নি। (কাতাদা থেকে বর্ণনাকারী) ইউনুস বলেন, আমি কাতাদাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে তাঁরা কিসের ওপর আহার করতেন? তিনি বললেন, দস্তরখানের ওপর। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪১৫)

তিন. খাবার গ্রহণকারী শুধু রসনাবিলাস করার জন্যই খাবে না; বরং খাবারের সময় এই নিয়ত করবে যে এর মাধ্যমে সে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও ইবাদতের জন্য শক্তি সঞ্চয় করবে। এ জন্য উদর পূর্ণ করে খানা না খাওয়া। উদর পূর্ণ করে আহার করার মধ্যে স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যা তৈরি হয়, যা বর্তমান চিকিৎসকগণ অকপটে স্বীকার করছেন।

আমাদের বিশ্বনবী (সা.) কত আগে এ ব্যাপারে আমাদের বলে গেছেন। মিকদাম ইবনে মাদিকারিব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মানুষ পেট হতে অধিক নিকৃষ্ট কোনো পাত্র পূর্ণ করে না। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে এমন কয়েক গ্রাস খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮০)

এ জন্য ক্ষুধার্ত হওয়ার আগে খাবার না খাওয়া এবং পরিতৃপ্ত হওয়ার আগেই খাবার থেকে হাত গুটিয়ে নেওয়া। যে ব্যক্তি তার জীবন এমন অভ্যাসে পরিণত করবে, তার কখনোই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না, ইনশাআল্লাহ।

খাবারের মধ্যে পালনীয় শিষ্টাচার-

আল্লাহর নামে শুরু করা এবং আহার শেষে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা। ডান হাত দিয়ে খাবার খাওয়া। ছোট ছোট লোকমা দিয়ে খাবার খাওয়া। ভালোভাবে চিবিয়ে খানা খাওয়া। খাবারে কোনো ধরনের দোষ-ত্রুটি না ধরা। হেলান দিয়ে না খাওয়া। নিজের সামনে থেকে খানা খাওয়া। যদি খাবার বিভিন্ন ধরনের হয় তাহলে নিজের সামনে থেকে খাওয়া জরুরি নয়। খাবারের লোকমা পড়ে গেলে তা উঠিয়ে নেওয়া। গরম খাবারে ফুঁ না দেওয়া। একই প্লেটে খেজুর (বা বিচিজাতীয় অন্য ফল) এবং তার বিচি একত্রে না রাখা। খেজুরের বিচি অন্য হাতে রাখা। (বুখারি, তিরমিজ, ইবনে মাজাহ)

নবী (সা.) খেজুর খেয়ে বিচিগুলো তর্জনী ও মধ্যমা আঙুলের পেটের ওপর রাখতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭২৯)

একই পাত্রে খেজুর এবং তার বিচি রাখতে নিষেধ করেছেন। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, খাবার ও তার উচ্ছিষ্ট একসঙ্গে না রাখা। তেমনি মুখ থেকে খেজুরের বিচি বের করে হাতের তালুর পরিবর্তে হাতের পিঠে রাখা, যাতে মুখের থুতু আঙুলে না লাগে এবং সে থুতু আবার খাবারে না লাগে। এর মাঝে প্রিয় নবী (সা.)-এর উত্তম রুচির বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

যদি কোথাও কিছু মানুষ খাবার খাচ্ছে এমনটা জানা থাকে তাহলে এমন অবস্থায় তাদের কাছে না যাওয়া। আর যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে যায় আর তারা খাবার খেতে আমন্ত্রণ জানায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে। যদি তারা লজ্জায় পড়ে খাবারের আমন্ত্রণ জানিয়েছে এ কথা বুঝতে পারে তাহলে সেখানে খেতে না বসা। আর যদি বুঝতে পারে তাদের সঙ্গে খাবার খেতে পছন্দ করবে, তখন বসতে সমস্যা নেই। (মুুখতাসারু মিনহাজিল কাসিদিন : ৯৪)

খাবারের পর পালনীয় শিষ্টাচার-

আঙুল চেটে খাওয়া। পাত্র পরিষ্কার করে খাওয়া। কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিন আঙুলে খাবার খেতেন এবং খাবার শেষ করে আঙুলগুলো চেটে খেতেন। (সহিহ মুুসলিম, হাদিস : ৫১৯৩)

খাবার শেষে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করা। কারণ যে বান্দা খাবার খেয়ে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে, তার প্রতি আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন। খাবার শেষে হাতের তেল ও চর্বি ভালোভাবে পরিষ্কার করা।

এম এইচ/

আরও পড়ুন:

ধর্ম ও জীবন: নিষিদ্ধ কাজ থেকে বেঁচে থাকার দোয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *