‘দেশের প্রতিটি সংবাদকক্ষে ফ্যাক্টচেকিং ইউনিট থাকা জরুরি’
নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর বাংলা: ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) সেন্টার ফর ক্রিটিক্যাল স্টাডিজ (সিকিউএস) আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইউল্যাব গবেষণা ভবনের মিলনায়তনে আজ শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশে ফ্যাক্টচেকিংয়ের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এএফপির ঢাকা ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম।
স্বাগত বক্তব্যে ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, ‘মিসইনফরমেশন মোকাবিলায় আমাদের প্রত্যেকের নিজেদের জায়গা থেকে দায়-দায়িত্ব রয়েছে। কিছু শেয়ার করার আগে তা যাচাই করা এবং তথ্যটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।’
আলোচনা সভার শুরুতে সাংবাদিক শফিকুল আলম বলেন, ‘মিসইনফরমেশন বা ডিসইনফরমেশন একটি রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতাকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। দেশের ইতিহাসের বহু তথ্যের ফ্যাক্টচেকিং দরকার আছে। এসব নিয়ে অনেক কাজ করতে পারব, যদি আমাদের নিউজরুমে ফ্যাক্টচেকিং বিভাগ থাকে। সংবাদকর্মীদের কপি লেখার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে। চলমান ঘটনার পাশাপাশি ইতিহাসের অনেক কিছু নিয়ে ফ্যাক্টচেক করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটা ফল্টলাইনে মিসইনফরমেশন নিয়ে কাজ করার সুযোগ আছে।’
আলোচনা পর্বে এএফপি ফ্যাক্টচেক বাংলাদেশের সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির বলেন, ‘আমাদের দেশের নিউজরুমে সতর্কর্তা কম। সংবাদকর্মীদের মাঝে তথ্য যাচাইয়ের অনলাইন দক্ষতা যোগ্যতারও কিছুটা ঘাটতি আছে। জবাবদিহিতার জায়গাটা শক্ত না। আইন প্রয়োগ করে করা যেতে পারে, কিন্তু এই পথে সমাধানের চিন্তায় ঝুঁকি আছে। আর সংবাদকর্মীদের দিক থেকে যাচাইয়ের তাগিদেও ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সেই জায়গায় বেশি কাজ করা লাগবে। সম্প্রতি অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট তারকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বিয়ে করেন, এবং একটি রম্য প্রকাশ হয় তার জুতা চুরি এবং থানায় মামলা করা নিয়ে। অথচ দেশের মূলধারার মিডিয়াগুলো সেটাকে দিব্যি সংবাদ আকারে একেবারে সত্য ঘটনা হিসেবে নিয়ে নিউজ দিয়ে দিল।’
বুম বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকার মিনহাজ আমান বলেন, ‘আইন প্রয়োগ করে আসলে সংবাদমাধ্যমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা কঠিন কাজ। এর বাইরে আমরা একটা ইকোসিস্টেম তৈরি করতে পারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। যার মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে এবং একে অপরকে পর্যবেক্ষণে রাখতে পারি। মিডিয়াওয়াচের কাজটা জারি রাখতে পারি। আর দেখেন, ম্যাক্সওয়েলের ঘটনায় আনন্দবাজার পত্রিকা আর আজতক দেখে নিউজ দিয়ে দিচ্ছি। নিউজে না আছে ম্যাক্সওয়েলের বক্তব্য, না আছে তার স্ত্রীর বক্তব্য, থানায় মামলা হয়ে থাকলে পুলিশের বক্তব্য থাকবে সেটিও নেই। এজন্য সংবাদকর্মীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের মৌলিক চর্চা বা গুগলিংটা আরও ভালো থাকলে এসব গ্যাপ আরও কমে যেত।’
ফ্যাক্টওয়াচের ফ্যাক্টচেকার শুভাশিস দীপ বলেন, ‘ফ্যাক্টচেকিং কোনো অটোমেটিক পদ্ধতি নয়। কোনো ছবি বা ভিডিও হয়তো লাখ লাখ বার শেয়ার হয়, তাতে এর কোয়ালিটি কমতে থাকে। তখন তার উৎস খুঁজে পেতে কঠিন হয়ে যায়, সময় বেশি লেগে যায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তথ্যের উৎসের স্বচ্ছতা। নেটওয়ার্কিংও এই কাজের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।’
ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের প্রধান উপদেষ্টা জাওয়াদ বিন হাফিজ বলেন, ‘প্রতিটি সংবাদমাধ্যমের একটা প্রতিযোগিতার বিষয় আছে, কার আগে কে নিউজটা দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে তথ্যটা যাচাইয়ের সুযোগ কমে বা যাচাইয়ের গুরুত্ব কমে যায়, এখানেই সমস্যাটা দাঁড়ায়’।
সিকিউএসের পরিচালক ও ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, ‘মিসইনফরমেশন মোকাবিলায় নিউজ ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমির মধ্যে আরও সংযোগ জরুরি। এ ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ হতে সংবাদমাধ্যমগুলো যেকোনোভাবে আমাদের সহযোগিতা চাইলে লিবারেল আর্টস ইউনিভার্সিটি হিসেবে আমরা তা দিতে প্রস্তুত। সংবাদকর্মীদের কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন মনে করলে আমরা বিনা খরচায় সে আয়োজন করতে রাজি আছি।’
আলোচনা অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন ফ্যাক্টওয়াচের ফ্যাক্টচেকার আপন দাশ। পুরো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন সিকিউএসের গবেষণা সহযোগী নাসরিন জেবিন।
আরো পড়ুন: