নিজের প্রয়োজনে “না” বলতে শিখুন!
লাইফস্টাইল ডেস্ক, সুখবর ডটকম: আপনি কি জানতে চান জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে “না” বলতে হবে? না জানলে এখনি পড়ুন আমাদের সম্পূর্ণ পোস্টটি আর জেনে নিন কোন কোন ক্ষেত্রে “না” বলতে হয়।
নেতিবাচক শব্দ প্রয়োগে আমাদের অনেকেরই সমস্যা হয়। আমরা অনেক সময় অন্যের মন রক্ষা করতে গিয়ে, নিজেদের ক্ষতি করে ফেলি। আমাদের পক্ষে সবার কাজ করা সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠেনা। কিন্তু তবু আমরা তাদের মন রাখতে এবং চক্ষুলজ্জার খাতিরে না বলতে লজ্জা পাই। এটা আমাদের সময়, সুযোগ এবং ক্ষেত্রবিশেষে সম্পর্ক নষ্টের কারন হয়ে দাড়ায়।
মুখের উপর “না” বলতে না পারলেও আমরা যখন হ্যাঁ বলেও একটি কাজ না করতে পারি, তখন আমাদের ব্যাপারে অন্যদের ধারনা খারাপ হয়ে যায়। তাই নিজের প্রয়োজনে এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় না বলা জানতে হবে। মনে রাখবেন, অন্যের জন্য নিজের ক্ষতি করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়, এতে করে সবাই আপনাকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করবে। আপনাকে ব্যক্তিত্বহীন মনে করবে।
আর যদি একটি কাজে একবার “হ্যাঁ” বলে ফেলেন লজ্জাবশত আর আপনি জানেন সেটা সম্ভব নয়, তাহলে সাময়িকভাবে মানুষকে খুশি না করে, সরাসরি না বলে দিন। আজ আমাদের পোস্ট সাজানো হয়েছে, কখন না বলা উচিত এই বিষয়টি নিয়ে। চলুন প্রিয় পাঠক দেরী না করে আলোচনা শুরু করা যাক।
জেনে নিন কখন নিজের প্রয়োজনে “না” বলবেন-
১. যখন আপনি সত্যিই ব্যস্ত-
আপনি যখন কোন কাজ মন দিয়ে করছেন, তখন যদি অন্য কেউ কোন কাজের অনুরোধ করেন, তবে তখন তাকে বিনয়ের সাথে “না” বলুন। “না” বলা অর্থ এই নয় যে, উগ্রস্বর প্রয়োগ করবেন। নিজের ব্যস্ততা জানিয়ে “না” বলুন, এতে অন্য কেউ আঘাতও পাবেনা, আবার আপনার কাজেরও বিঘ্ন সৃষ্টি হবেনা।
প্রত্যেক সময় যদি “না” বলতে না পারার কারনে আপনার কাজ নষ্ট হয়, তাহলে আপনি সবকিছুতেই পিছিয়ে যাবেন। আর আপনাকে মানুষ গুরুত্ব দেওয়াও ভুলে যাবে। কারন যাকে চাওয়া মাত্রই পাওয়া যায়, তার ব্যাপারে মানুষের কোন আগ্রহ থাকেনা। তাই “না” বলা শিখুন।
২. যারা অকৃতজ্ঞ-
আমরা যখন কারো হয়ে কোন কাজ করি আমাদের উদ্দেশ্য থাকে অপর মানুষটিকে সাহায্য করা, তার থেকে ধন্যবাদ বা ফিরতি উপকার পাওয়া নয়। কিন্তু এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা আপনার থেকে উপকার নিয়ে তার বিনিময়ে কৃতজ্ঞ তো হবেই না, উল্টা আপনাকে ছোট করে কথা বলবে, আপনার করা কাজের খুঁত খুজে বের করবে।
এ ধরনের মানুষের উপকার করা থেকে বিরত থাকুন। তারা যদি বারবার আপনাকে অপমান করা সত্ত্বেও আবার এভাবে উপকার চায়, সেক্ষেত্রে সোজাসুজি “না” বলে দিন। এক্ষেত্রেও অতিরিক্ত কর্কশভাষা প্রয়োগ করবেন না। তবে নিজের প্রয়োজনে, এবং আপনার উপকার যে সস্তা নয় যেটা বোঝাতে দৃঢ়ভাবে “না” বলুন।
৩. যে কাজ আপনি পারবেন না-
অনেক সময় অনেক কাছের মানুষ বা ভালবাসার মানুষদের কোন কাজের বা সাহায্যের অনুরোধ ফেলা কষ্টকর হয়ে যায়। মুখের উপর “না” বলতে না পেরে আপনি হয়ত হ্যাঁ বলে দেন। কিন্তু যে কাজ আপনি পারবেন না, সেটা পারবেন অথবা করবেন বলাতে আপনার উপকারের প্রতি অপর ব্যক্তি আশা করে বসে থাকবে।
কিন্তু যদি আপনি কাজটি করতে ব্যর্থ হন তাহলে তখন সেই ব্যক্তিই আপনার কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারে, যে আপনি বিষয়টি আগেই কেন জানান নি? এতে আপনাদের মধ্যে সম্পর্ক ভাল হওয়ার পরিবর্তে উল্টা খারাপ হয়ে যেতে পারে।
তাই এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে নিজের অপারগতা সুন্দরভাবে জানিয়ে “না” বলে দিন। এতে প্রাথমিকভাবে কেউ আপনাকে খারাপ ভাবলেও পরে বিষয়টি ঠিকই বুঝতে পারবে।
৪. সুবিধাবাদী মানুষদের “না” বলুন-
এমন কিছু মানুষ থাকে যারা অন্য সময়ে আপনার কোন খোঁজ খবর রাখবে না, আপনাকে মনেও করবে না। শুধুমাত্র যখন আপনাকে এদের প্রয়োজন হবে তখন আপনার কাছে বিভিন্ন কাজের ফরমায়েশ নিয়ে আসবে৷ এরা মূলত আপনার কাছের মানুষ, এবং ভালবাসার মানুষ।
এরা আপনার দূর্বলতা জানে বিধায় আপনাকে এরা ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আপনি যদি এদের কাজ বারবার বিনা স্বার্থে করতে থাকেন, এরা কখনোই আপনার মূল্য বুঝতে পারবে না। বরং আপনাকে গুরুত্বহীন বলে ভাববে। তাই এদের কাজে “না” বলা শিখুন।
নিজের গুরুত্ব বোঝাতে এবং অকারনে সময় নষ্ট না করতে বেকার যেকোন কাজেই “না” বলুন। এক্ষেত্রে দেখার বিষয় নয় যে, কে আপনার আপনজন! কারন আপনজন যদি কেবল সুবিধাবাদী হয়, তবে তার সব কাজে সাহায্য না করাই উচিত।
৫. অনৈতিক কাজে “না” বলুন-
নিষিদ্ধ কাজে সবার আগ্রহ বেশী থাকে। আমরা যাদের সাথে সারাদিন মিশি তাদের কর্মকান্ড দ্বারা আমরা প্রভাবিত হয়ে থাকি৷ তারা বললে আমরা কোন কাজে না বলতে পারিনা। যেমন বন্ধুরা যদি থার্টি ফাস্ট নাইট বা পূজায় বলে যে চল একটু মদ খাওয়া যাক, বা মেয়েদের টিজ করা যাক, তাহলে এ ধরনের কাজে “না” বলুন।
কারন একবার অভ্যাস হয়ে গেলে এ ধরনের কাজ থেকে নিজেকে আর বিরত রাখতে পারবেন না। আর বন্ধুরা বিপদে পড়লে আপনি অনৈতিক কাজ না করেও ফেসে যাবেন। তাই শুরুতেই “না” বলুন। বিবাদে না জড়িয়ে শুধু খারাপ কাজ করায় আপনার অনাগ্রহের কথা তাদের সাফসাফ জানিয়ে দিন।
এই “না” আপনাকে বড় ধরনের বিপদ থেকে বাচিয়ে দেবে। আর বন্ধুরাও নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে খারাপ কাজ থেকে সরে আসবে।
উপসংহার-
একজন মানুষের পক্ষে সবকাজ করা সম্ভব নয়। সে ব্যস্ত থাকতে পারে, তার ইচ্ছা না হতে পারে, বা কাজটিতে আপত্তি থাকতে পারে। শুধুমাত্র অন্যদের মন রক্ষার্থে সবসময়ই হ্যাঁ বলা বন্ধ করে দিন। আপনার ও ব্যক্তিত্ব রয়েছে। নিজেকে সবার কাছে ছোট প্রমান না করলেও আপনি ভালভাবে চলতে পারবেন। নিজের ব্যক্তিত্বহানী হয়, নিজেকে অসুবিধায় পড়তে হয়, এমন কাজ করা বন্ধ করে দিন। তবে “না” বলার মানেই কিন্তু তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ বা উগ্রভাষায় কথা বলা নয়। আপনার সমস্যা বুঝিয়ে বলুন, ব্যস্ততার কারন জানান। অন্যদের তাহলে আপনার কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারনা জন্মাবে।
এম এইচ/
আরও পড়ুন: