প্রচ্ছদ

প্রাচীন ইজিপ্টের ইতিহাস: এক বিস্ময়কর সভ্যতার উত্থান ও পতন

প্রাচীন ইজিপ্টের ইতিহাস: এক বিস্ময়কর সভ্যতার উত্থান ও পতন

প্রাচীন ইজিপ্ট মানব সভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও রহস্যময় অধ্যায়। নীল নদের তীরে গড়ে ওঠা এই সাম্রাজ্য প্রায় ৫০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে ছিল এবং আজও তার স্থাপত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং শাসনব্যবস্থা বিশ্বের মানুষকে মুগ্ধ করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রাচীন ইজিপ্টের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

সম্পূর্ণ ভিডিও দেখুনঃ

https://youtu.be/0oRXHnt1whQ


ইজিপ্টের জন্ম ও নীল নদের গুরুত্ব

ইজিপ্টের ইতিহাসের সূচনা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩১৫০ সালের দিকে, যখন প্রথম ফারাও নারমার (বা মেনেস) উপরের ও নিচের ইজিপ্টকে একত্রিত করেন। এই সময় থেকেই এক কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

নীল নদ ছিল ইজিপ্টের জীবনরেখা। নদীটি কৃষি, পরিবহন, এবং বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। এর বার্ষিক বন্যা উর্বর মাটি সরবরাহ করত, যা খাদ্য উৎপাদন ও সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


ফারাও ও পিরামিডের যুগ

প্রাচীন ইজিপ্টে ফারাওদের দেবতা-রাজা হিসেবে গণ্য করা হতো। তারা তাদের শাসনকালকে অমর করে রাখতে বিশাল স্থাপত্য নির্মাণ করতেন, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রেট পিরামিড অব গিজা

👉 গিজার তিনটি বিখ্যাত পিরামিড:

  1. খুফুর পিরামিড (সবচেয়ে বড়, নির্মাণকাল: খ্রিস্টপূর্ব ২৫৬০)

  2. খাফরার পিরামিড (মধ্যম আকারের, এতে স্ফিংক্স সংযুক্ত)

  3. মেনকাউরার পিরামিড (সবচেয়ে ছোট, কিন্তু শৈল্পিক দিক থেকে উন্নত)


প্রাচীন ইজিপ্টের ধর্ম ও দেবতারা

প্রাচীন ইজিপ্টীয়রা বহুদেবতাবাদে বিশ্বাস করত এবং বিভিন্ন দেবতাদের উপাসনা করত।

🔹 সূর্যের দেবতা: ‘রা’
🔹 মৃত্যুর দেবতা: ‘অ্যানুবিস’
🔹 পুনর্জন্মের দেবতা: ‘ওসিরিস’
🔹 প্রেম ও জাদুর দেবী: ‘আইসিস’

তারা বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পর মানুষের আত্মা বিচার পাবে, যেখানে ওসিরিসের আদালতে হৃদয়কে পালকের সাথে ওজন করা হবে। যদি হৃদয় ভারী হতো, তবে সে নরকে চলে যেত।


বিখ্যাত ফারাও ও তাদের অবদান

ইজিপ্টের ইতিহাসে কিছু বিখ্যাত ফারাও রয়েছেন, যাঁরা তাদের নির্মাণকাজ, যুদ্ধজয়, এবং শাসনব্যবস্থার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।

🔹 রামেসেস II (রামেসেস দ্য গ্রেট): তিনি প্রায় ৬০ বছর রাজত্ব করেন এবং কারনাক ও আবু সিম্বেল মন্দির তৈরি করেন।
🔹 তুতানখামুন: অল্প বয়সে মারা যান, কিন্তু তার অক্ষত সমাধি আবিষ্কার হয় ১৯২২ সালে, যা ইতিহাসের অন্যতম বড় আবিষ্কার।
🔹 হাটশেপসুত: ইজিপ্টের প্রথম নারী ফারাও, যিনি কূটনৈতিক দক্ষতার জন্য পরিচিত।
🔹 ক্লিওপেট্রা VII: ইজিপ্টের শেষ স্বাধীন শাসক, যিনি রোমান সাম্রাজ্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেন।


বিদেশী শাসন ও ইজিপ্টের পতন

খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ইজিপ্ট দখল করেন এবং গ্রিক শাসন শুরু হয়। এরপর, ৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান সাম্রাজ্য ইজিপ্ট দখল করে, এবং ইজিপ্টের স্বাধীনতা শেষ হয়।

৬৪০ খ্রিস্টাব্দে, মুসলিম বাহিনী ইজিপ্ট দখল করে এবং ইসলাম এখানে প্রচারিত হয়। এর পর ইজিপ্ট বিভিন্ন শাসকের অধীনে চলে যায়, যার মধ্যে উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং ব্রিটিশ শাসন অন্যতম।


আধুনিক ইজিপ্ট

১৯৫২ সালে, ইজিপ্ট ব্রিটিশদের শাসন থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বর্তমান সময়ে, ইজিপ্ট তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

🌍 বিখ্যাত স্থান:

  • গিজার পিরামিড

  • লুক্সরের কারনাক মন্দির

  • কায়রো মিউজিয়াম

  • আবু সিম্বেল


উপসংহার

প্রাচীন ইজিপ্ট শুধু একটি সভ্যতা নয়, এটি এক মহাজাগতিক ইতিহাসের অংশ। হাজার বছর ধরে এই দেশ তার সংস্কৃতি, ধর্ম, ও স্থাপত্যের জন্য বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করেছে। আজও, ইজিপ্ট তার বিস্ময়কর স্থাপত্য এবং রহস্যময় ইতিহাসের জন্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে যাচ্ছে।

আপনি কি কখনো ইজিপ্টের পিরামিড ও মন্দির ঘুরে দেখতে চান? আপনার মতামত আমাদের কমেন্টে জানান!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *