বাণিজ্য

বিদেশ যাচ্ছে রংপুরের আলু

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর বাংলা: বিভাগ থেকে বিদেশে আলু রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে পীরগাছা উপজেলা। এবার সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন আলু রপ্তানি করা হবে।

রংপুরের উৎপাদিত আলু রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, নেপাল ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় আলু পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের এ উদ্যোগ কৃষক ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।

সম্প্রতি মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়ন ও পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়ন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলু রপ্তানির কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলাম গত মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে আলু রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি কর্মসূচির উপদেষ্টা মাহমুদ হোসেন প্রমুখ।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুর বিভাগ থেকে বিদেশে আলু রপ্তানিতে শীর্ষে রয়েছে পীরগাছা উপজেলা। গত বছর এ উপজেলা থেকে সাড়ে ৬০০ মেট্রিক টন আলু বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল। এবার সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন এ উপজেলা থেকে আলু রপ্তানি করা হবে। ডায়মন্ড, গ্রানুলা, কুমারিকা, কুম্ভিকাসহ বিভিন্ন জাতের আলু বিক্রি হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আকমল হোসেন জানান, এবার রংপুর জেলায় ৫১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে, যা গতবারের তুলনায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেশি। উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে আলু রপ্তানি শুরু করা হয়েছে। এখন যেভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে আলু কেনার চাহিদা বাড়ছে, তাতে এবার রংপুর থেকে আলু রপ্তানির পরিমাণ ৫০ হাজার টনের কাছাকাছি পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

সম্প্রতি পীরগাছা উপজেলার বেলতলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আলুচাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমি থেকে সরাসরি আলু তুলে বিদেশে রপ্তানির সুযোগ পেয়ে খুশি কৃষকেরা। চাষি নুরুল হক বলেন, গত বছর থেকে আলু উৎপাদন করছেন। বিদেশে পাঠানোর উপযোগী উন্নতমানের আলু কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তাই উন্নত জাতের আলু চাষাবাদ করেন। তাই অন্য কৃষকের তুলনায় বেশি লাভবান হচ্ছেন।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জমি থেকে প্রতি কেজি আলু ১২-১৪ টাকা দরে বিক্রি করছেন চাষিরা, যা গত বছর এর অর্ধেক ছিল। এবার দাম পাওয়ায় পীরগাছার কৃষকেরা খুশি। দেউতি এলাকার কয়েকজন কৃষক বলেন, রংপুরের আলু সারা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হলেও কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পান না। এবার কিছুটা পাওয়া যাচ্ছে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জাতের আলুর চাহিদার কথা মাথায় রেখে অনেক জাতের আলু আবাদে সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। এবার রংপুর জেলার ৪০০ আলুচাষিকে উন্নত আলু চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ ছাড়া, উন্নতমানের আলুবীজও সরবরাহ করা হয়।

পীরগাছার কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সাড়ে চার হাজার মেট্রিক টন আলু রপ্তানির অর্ডার পাওয়া গেছে। সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে সাদা আলুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেই চাহিদার কথা বিবেচনা করে ডায়মন্ড, কুমারিকা, গ্রানুলা, কুম্বিকা এলুয়েট, এস্টারিকস, সানসাইনসহ বিভিন্ন জাতের সাদা আলু উৎপাদনের জন্য কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও উন্নত জাতের আলুবীজ সরবরাহ করা হয়।

সাইফুল ইসলাম আরও জানান, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সাদা আলুর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও পার্শ্ববর্তী নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটানে আবার লাল আলুর চাহিদা রয়েছে। তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে উন্নত জাতের লাল আলুর উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) রংপুরের উপপরিচালক আবদুল হাই বলেন, রংপুর ছাড়াও নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে এ বছর আলু রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী বলেন, সারা দেশে চাহিদার ২৫ শতাংশ আলুর জোগান দেয় রংপুর বিভাগ। তাই রংপুর বিভাগ থেকে আলু রপ্তানির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে সরকার।

আরো পড়ুন:

আজ থেকে ব্যাংক লেনদেনে নতুন সময়সূচি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *