বিদ্যা+আনন্দ = বিদ্যানন্দ, বাংলার অবিচ্ছেদ্য সন্ধি : এত সুন্দর বাংলা শব্দ সাম্প্রদায়িকতায় বন্দী !
খোকন কুমার রায়:
বিদ্যার আনন্দও মাঝে মাঝে বিষাদ হয়ে যায় যখন দেখি ভাষা ও শব্দমালা সাম্প্রদায়িকতার আঘাতে মলিন হয়ে যায়। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলো এ কাজটি করে অত্যন্ত কৌশলে। মূলতঃ এদের মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি কোনো দরদ নেই, আছে অবজ্ঞা, অবহেলা। চিন্তায়, চেতনায়, আচরণে, আবরণে এরা কখনোই হয়তো বাঙালি ছিল না। এদের প্রকৃত ঠিকানা হয়তো অন্য কোথাও, এ বাংলায় নয়।
পৃথিবীর কোনো ভাষাই এককভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, অন্যান্য ভাষা হতে শব্দ নিয়ে সমৃদ্ধ হয়। আমাদের বাংলা ভাষাতেও প্রচুর পরিমাণে বিদেশী শব্দ যেমন- আরবী, পার্শী, উর্দু, হিন্দী, ইংরেজি, সংস্কৃত প্রভৃতি শব্দ রয়েছে যা বাংলাকে সমৃদ্ধ করেছে।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মানুষের জীবিকা- উভয় সংকট নিয়েই এগুচ্ছে সরকার
হাজার বছরের বাংলা ভাষা ও বাঙালি ঐতিহ্য বার বার আক্রমণের শিকার হয়েছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দ্বারা। তারপরও আপন মহিমায় টিকে আছে এবং থাকবে।
যে ভাষা ও সংস্কৃতি বাঙালির রক্তধারায় প্রবাহিত হচ্ছে, যতদিন বাঙালির ধমনীতে এক ফোটাও রক্ত প্রবাহমান থাকবে, ততদিন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিজস্ব রূপে সুসংহত থাকবে। ভাষা ও সংস্কৃতিকে হত্যা করা যায় না। কিন্তু যুগে যুগে এ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও চক্রান্তকারীরা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হেনেছে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছে কিন্তু সর্বদাই তারা পরাজিত হয়েছে।
বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদদের রক্তে রাঙানো বাংলার প্রতিটি ধ্বনি, বর্ণ ও শব্দ। বুকের তাজা রক্তে রাঙানো শক্তিশালী এ বর্ণমালা কখনোই অপশক্তির নিকট নতি স্বীকার করেনি আর করবেও না।
মধ্যযুগীয় বিখ্যাত কবি আব্দুল হাকিম তাঁর “বঙ্গবাণী” কবিতায় লিখেছিলেন,
“যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।”
কাজেই যারা এই বাংলায় জন্ম নিয়েও বাংলা ভাষা ও শব্দকে অবহেলা ও সাম্প্রদায়িকীকরণ করে, এ পবিত্র ভূমিতে এদের বসবাসের কোনো অধিকার নেই।
মাতা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি হোক আমাদের সকলের প্রিয়- এটাই প্রত্যাশা।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, সুখবর.কম।