শৈশব-কৈশোর

ময়মনসিংহের একটি স্কুলে কার্ড দিলেই বের হচ্ছে স্যানিটারি প্যাড

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর বাংলা: মাসিক ঋতুচক্র বা পিরিয়ডের সময় স্কুলে এসে মেয়েদের যাতে ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেজন্য ভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন ময়মনসিংহের একটি স্কুলের বিদায়ী শিক্ষার্থীরা।

বিদায় বেলায় স্কুলের জন্য তারা উপহার হিসাবে একটি স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন উপহার দিয়েছেন, যাতে প্রয়োজনের সময় একটি কার্ড স্ক্যান করলেই বেরিয়ে আসবে স্বাস্থ্যসম্মত প্যাড।

ময়মনসিংহ বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি বিদায়ী শিক্ষার্থীদের এমন উপহারে উচ্ছ্বসিত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

এমন উপহার দেওয়ার বিষয়ে বিদায়ী শিক্ষার্থী নাবিহা জান্নাত প্রিয়তি বলেন, “বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজনের আগে সবাই কিছু উপহার দেওয়ার চিন্তা করে। কিন্তু ব্যতিক্রম কিছু দেওয়ার ভাবনা থেকে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়াশরুমে হাইজিন স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন আছে বলে জানতে পারি।“

প্রিয়তি বলেন, “মূলত সেই ধারণা থেকে বিদ্যাময়ী স্কুলে এই উপহার। দিবা শাখার ১৩৬ জন শিক্ষার্থী ১৮০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে এই মেশিন কিনে দেই।“

এই মেশিনের ব্যবহার খুব সহজ জানিয়ে স্কুলের আরেক বিদায়ী শিক্ষার্থী মায়মুনাহ সরকার অর্থি বলেন, খুব সহজেই কার্ডের মাধ্যমে স্ক্যান করলেই একটি প্যাড চলে আসবে।

“এখন আর লজ্জায় কাউকে ক্লাস মিস করতে হবে না।“

তিনি বলেন, মেশিনটি চলে বিদ্যুৎ ও ওয়াইফাই কানেকশন দ্বারা। প্রত্যেক ক্লাসের ক্লাস ক্যাপ্টেন ও নারী শিক্ষকদের কাছে কার্ড দেওয়া আছে। স্কুলে আসার পর যে কারও পিরিয়ড হলে তারা সহজেই সেবাটি পাবে।

তার ভাষ্য, “আমরা যে অভিজ্ঞতার মধ্যে স্কুল জীবন শেষ করেছি, সেই সমস্যার সম্মুখীন যেন ছোটদের হতে না হয়, সেই লক্ষ্যে আমাদের এই কার্যক্রম।“

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী লুবনা তাসনিম লাবণ্য বলেন, “পিরিয়ড সম্পর্কে আমরা অনেকে হীনমন্যতায় ভুগী। কারও সঙ্গে কথা বলতে চাই না। আমরা যেহেতু মেয়ে হিসেবে জন্ম নিয়েছি সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই প্রতিমাসে এটা আমাদের হবে।“

লাবণ্য বলেন, “আমাদের বড় আপুরা একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে। হাইজিন স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের ফলে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। ক্লাসের অনুপস্থিতিও কমবে।“

দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী অগ্নিলা ঘোষ বলেন, এই সমস্যার কারণে স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যেতে হতো।

“এখন আর আমাদের বাসায় যেতে হবে না। কেউ লজ্জাও পাবে না। যার প্রয়োজন হচ্ছে সহজেই প্যাড নিয়ে সুরক্ষিত হচ্ছে। বড় আপুদের এমন উপহারে আমরা মুগ্ধ।“

এমন উপহারে খুশি অভিভাবকরাও।

অভিভাবক ঝর্ণা দাশ  বলেন, মেয়েদের পিরিয়ড হলে মানসিক অবসাদে ভোগে। এখন আর সেটি হবে না। তারা নিজেদের সুরক্ষা নিজেরাই নিতে পারবে। মেয়েদের সুরক্ষার জন্য এমন কাজে বিদায়ী মেয়েদের ধন্যবাদ জানাই।

বিষয়টি নিয়ে স্কুলের সামাজিক বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক আয়েশা আক্তার খাতুন বলেন, ”মেয়েরা এমন উপহার দিতে চাইলে আমরা সাধুবাদ জানাই। বিদ্যাময়ীর মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ শিখবে। এক সময় মেয়েরা ইতস্তত বোধ করত। এখন তারা এ থেকে বেরিয়ে এসেছে।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার বলেন, ”আমাদের মেয়েরা এখন অনেক এডভান্সড।“

তাদের কিছু কাজ আমাদের মুগ্ধ করে। বিদায়ী শিক্ষার্থীদের এমন উপহারে সুরক্ষা পাবে প্রতিষ্ঠানটির  দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী।

নাসিমা বলেন, ”এর ফলে পুরনো ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে এসেছে তারা। মেয়েদের লজ্জা ও ভয় কমার পাশাপাশি স্কুলে অনুপস্থিতি কমবে। তারা সুরক্ষায় থাকবে।”

অন্যান্য স্কুলেও এই মেশিন স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ”আমরাও চাই মেয়েরা আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক। তারা নিজেদের বিষয়ে সচেতন হোক।”

আরো পড়ুন:

প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার-২০২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *