ক্যারিয়ারলাইফস্টাইলসর্বশেষ খবর

লিংকডইনের ১০ টি ট্রিকস, যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য অতি সহায়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: লিংকড ইন বর্তমান যুগের ডিজিটাল সেক্টর এর সকল চাকরির আবেদন করার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম মাধ্যম। এই মাধ্যমটির প্রোফাইল কিভাবে সুন্দরভাবে তৈরি করবেন এবং চাকরির ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন সেটা আজকের পোস্ট পড়ে জেনে নিন।

লিংকডইন বর্তমানে খুবই পরিচিত একটি নাম, বিশেষত চাকরি প্রত্যাশীদের নিকট। এখন প্রায় সব ধরনের প্রাইভেট জবের ক্ষেত্রেই প্রার্থীর লিংকডইন আইডি থেকে তার কাজ এবং অভিজ্ঞতার বিষয়ে নিয়োগকর্তা ধারনা নিয়ে থাকেন।

জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম লিঙ্কড ইন। ফেইসবুক বা টুইটারের চেয়ে এটি কিছুটা ভিন্ন ধরনের। অনেকটা বিশেষায়িত সাইট এটি। এটি একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেখানে আপনার প্রোফাইল এ মূলত আপনার কাজ, অভিজ্ঞতা, পেশাগত দক্ষতা, পড়াশোনা, শখ ইত্যাদি বিষয়গুলো হাইলাইট করা হয়। ইতিমধ্যে পেশাজীবীদের জন্য দারুণ কার্যকরি হয়ে উঠেছে এটি। আপনি যদি কোম্পানিতে কাজের জন্য বা ফ্রিল্যান্সিং করতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে আজই লিংকডইন এ একটি একাউন্ট করে ফেলুন।

এটি আপনাকে কাজ পেতে সাহায্য করবে। লিংকডইন বর্তমানে পেশাগত ক্ষেত্রে এতটাই কার্যকর হয়ে উঠেছে যে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ লিংকডইন ব্যবহার করছেন। পেশাজীবীদের জন্য সামাজিক নেটওয়ার্ক লিঙ্কডইনে কিভাবে চাকরি পেতে পারেন সেটি হচ্ছে মূল কথা। কিভাবে অন্যদের চেয়ে নিজেকে উপরে তুলে আনা যায়, আলাদা করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে,এবং অন্যদের চেয়ে একদম আলাদা, আকর্ষনীয়,  নিজের সম্পর্কে কার্যকর তথ্যসমৃদ্ধ একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে প্রথমেই।

কারন প্রোফাইল দেখেই অন্যরা অথবা নিয়োগকর্তা আপনার অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। লিংকডইন একাউন্ট অনেকেই খুলে থাকেন কিন্তু সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানার অভাবে এটা তেমন কোন উপকারে আসে না। তাই আজ আমরা আমাদের আয়োজন সাজিয়েছি কিভাবে সঠিক এবং কার্যকরভাবে লিংকডইন ব্যবহার করবেন তার টিপস এবং ট্রিকস নিয়ে। প্রিয় পাঠক চলুন দেরী না করে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।

লিংকড ইন ব্যবহারের কিছু বিশেষ নিয়ম যা চাকরি পেতে সহায়ক:

১. প্রোফাইল নাম- লিংকডইন প্রোফাইলে যেকোন মানুষ প্রথমেই যে বিষয়টি লক্ষ্য করে তা হল আপনার প্রোফাইল নাম। ঠিকমত বা দৃষ্টিকটুভাবে নাম লেখায় অনেকসময় মানুষ আপনার প্রোফাইল ভিজিট করে বিরক্ত হতে পারে। প্রোফাইল নামে সব বড় হাতের অক্ষর বা সব ছোট হাতের অক্ষর অথবা ইংরেজি ব্যাতীত অন্য ভাষায় নাম না লেখাই উচিত।

তাহলে প্রোফাইল নামটি বোধগম্য হবে, এবং সকলের চোখেই সেটা ভাল লাগবে। আপনি হয়ত ভাবছেন এটাতো খুবই ছোট একটি বিষয়, কিন্তু না, এটার মাধ্যমে আপনার রুচি, পেশাদারিত্ব,  গুছিয়ে কাজ করার বিষয়টি ফুটে উঠবে। যেমন ABDUR RAHIM প্রোফাইল নাম না লিখে লিখতে পারেন Abdur Rahim’ এটা দেখতে এবং পড়তে ভাল লাগবে।

২. দৃষ্টিনন্দন প্রোফাইল- নজর দিন আপনার প্রোফাইল কতটা নান্দনিক তার উপর। প্রোফাইলটি পড়তে এবং দেখতে ভালো লাগছে কিনা? বানান, ব্যাকরণ ইত্যাদি যাচাই করে দেখুন, দীর্ঘ এবং কঠিন বাক্য এড়িয়ে চলুন। তা নাহলে অনেকে বিরক্ত হয়ে পুরোটা না পড়েই আপনার প্রোফাইল থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

প্রোফাইলে সব কিছু লেখার ভাষা হবে সহজ কিন্তু আকর্ষনীয়। এতে করে যারাই আপনার প্রোফাইল পড়বে তাদের আপনার ব্যাপারে ইতিবাচক ধারনা সৃষ্টি হবে।

৩.লিংকডইন এর ছবি- লিংকডইন এর প্রোফাইলে যে ছবিটি ব্যবহার করবেন তা অবশ্যই প্রফেশনাল হতে হবে। কারন লিংকডইন এ প্রোফাইল খোলা হয় পেশাদারি কারনে। লিংকডইনের ছবিটি কেমন হবে? ছবির গুরুত্ব সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন, অথচ ছবি দেখেই আপনার সম্পর্কে মানুষের মনে প্রাথমিক ধারণা জন্মাবে।

কভার ফটোতে এমন ছবি রাখার চেষ্টা করুন যেটি দেখে মানুষ আপনার কাজ সম্পর্কে একটি ধারণা পাবে। যেমন আপনি কোথাও বক্তব্য রাখবার সময় ছবি থাকলে, বা ছবি তোলার সময়, বা টাইপিং করার সময় ছবি থাকলে সেটি প্রোফাইলে দিন। – সেটি দর্শকের মনে ইতিবাচক ছাপ ফেলবে আপনার আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্বগুণ এবং যোগ্যতা সম্পর্কে।

৪. লিংকডইন এর summary- নিয়োগকর্তারা আপনার পিছনে দীর্ঘ সময় খরচ করবে না। তারা আপনার বিষয়ে জানতে লিংকডইন Summary পড়ে দেখবে। লিংকডইনের ‘Summary’  অনেকটা এলেভেটর পিচের মতো। খুব সংক্ষেপে ২-১ লাইনের মধ্যে নিজেকে তুলে ধরুন।

ক্যারিয়ারে আপনার লক্ষ্য কি, ভবিষ্যত এ ক্যারিয়ার এ কি পরিবর্তন আনতে চান এবং কেন আপনি এর যোগ্য – নিয়োগকর্তাদের মনে সাধারণত যে প্রশ্নগুলো থাকে খুব অল্পকথায় সেগুলোর উত্তর দিয়েই একটি সংক্ষিপ্ত, আকর্ষণীয় সামারি লিখে ফেলতে পারেন আপনি।

৫. অভিজ্ঞতার উল্লেখ- আপনি যদি ছাত্র হয়ে থাকেন এবং লিংকডইন এ একাউন্ট ওপেন করে থাকেন সেক্ষেত্রে ছাত্রজীবনে কাজের অভিজ্ঞতা থাকে না অনেকেরই। এজন্য অনেকেই অভিজ্ঞতার জায়গায় শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরণ দিয়ে থাকেন। এগুলো মূলত ‘Education’ সেকশনে লেখা উচিত।

অভিজ্ঞতার জায়গাটি একদম খালি না রেখে আপনি কী কী কাজ করেছেন সেগুলো উল্লেখ করুন। অনেকেই কোচিং সেন্টারে পড়ান, ছোটখাটো ইন্টার্নশিপ করেন, পার্টটাইম জব করেন, এছাড়া অনলাইনে লেখালেখি, ভিডিও বানানো, ছবি তোলা ইত্যাদি নানারকম কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে – আপনি এমন কিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকলে অভিজ্ঞতার জায়গায় সেগুলো তুলে ধরুন।

এবারে আসা যাক কর্মজীবীদের প্রসঙ্গে। মনে করুন আপনি এ পর্যন্ত তিনটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন, কিন্তু লিংকডইন ফোকাস করবে কেবল একটি প্রতিষ্ঠানকে – সর্বশেষ যে প্রতিষ্ঠানে আপনি চাকরি করছেন বা করেছেন।

সুতরাং এই প্রতিষ্ঠানে আপনার কাজ ও অর্জনগুলোকে ধাপে ধাপে সাজিয়ে স্পষ্ট করে উল্লেখ করুন, গুছিয়ে উপস্থাপন করার জন্য প্রেজেন্টেশন, ভিডিও, ছবি ইত্যাদি যুক্ত করতে পারেন, এতে নিয়োগকর্তা আপনার প্রতি আরো আকৃষ্ট হবেন।

৬. ইমেইল চেক করুন ও রিপ্লাই দিন- আপনাকে যারা কাজ দেবে বা যোগাযোগ করতে চাইবে তারা অবশ্যই আপনাকে ইমেইল করবে এজন্য প্রতিদিন যতটা সম্ভব আপনাকে সময় বের করে ইমেইল এর রিপ্লাই দিতে হবে। যোগাযোগের জন্য একটি মাত্র ইমেইল ব্যবহার করুন। অনেকেরই কয়েকটি ফোন নাম্বার/ইমেইল একাউন্ট থাকে। কিন্তু একটি একাউন্ট থাকবে যেখানে আপনাকে সবসময় পাওয়া যাবে।

সেই ইমেইলটি প্রতিনিয়ত চেক করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দ্রুত রিপ্লাই পেলে প্রাপকের মনে আপনার পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। অনেকে শুধু অফিসে মেইল চেক করেন, বাসায় আসলে বা ছুটির দিনে মেইল চেক করেন। অনেকে শুধু অফিসে মেইল চেক করেন, বাসায় আসলে বা ছুটির দিনে মেইল চেক করেন না/ রিপ্লাই দেন না। এগুলো অপেশাদারিতার লক্ষণ।

৭. প্রোফাইলে সবাইকে যুক্ত রাখা- কানেকশন তৈরি অনেক বড় একটি দক্ষতা। ফেসবুকে অনেকেই আছেন একদম কাছের মানুষ ছাড়া কাউকে ফ্রেন্ডলিস্টে রাখেন না। কর্পোরেট জগতে এটি বোকামি হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রোফাইল যত মানুষ দেখবে ততই ভাল। এছাড়াও যেহেতু আপনি ফ্রিল্যান্সিং বা চাকরি করতে চান তাহলে মিটিং বা অন্য কোথাও গিয়ে মানুষের সাথে পরিচিত হন, সখ্যতা গড়ে তুলুন।

৮. সুপারিশ পাওয়ার উপায়- লিংকডইন এ আপনার সঙ্গে যুক্ত পেশাদারদের কাছ থেকে বিভিন্ন পেশাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার সুপারিশ পাবেন। নিয়োগকর্তারা অনেকক্ষেত্রেই ইন্টারভিউর আগে চোখ বুলিয়ে নেন প্রার্থীর লিংকডইন প্রোফাইলে। এ ক্ষেত্রে পেশাদারদের সুপারিশ আপনাকে এগিয়ে রাখবে চাকরি পাওয়ার দৌড়ে। যা পেশাদারি ক্ষেত্রে আপনাকে কার্যকর সুযোগ এনে দেবে।

৯.  নিয়মিত কন্টেন্ট শেয়ার করুন- লিংকডইন এ নিয়মিত বিভিন্ন কনটেন্ট শেয়ার করুন। আপনার কোম্পানির ব্লগ পোস্ট লিংকডইন ফিড এর মাধ্যমে শেয়ার করুন। এছাড়াও বিভিন্ন গ্রুপে আপনার কোম্পানির ব্লগ পোস্ট ও অন্যান্য ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয় লিংক সাবমিট করুন। এতে করে আপনার নেটওয়ার্ক যেমন বড় হবে, তেমনি মানুষ আপনার সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠবে। আপনি যত বেশী সক্রিয় থাকবেন আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়বে।

১০. নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন- অনেকেই লিংকডইন ব্যবহার করে থাকে কেবল চাকরি খোঁজার উদ্দেশ্যে। অথচ প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও যোগ্যতা না থাকলে এভাবে চাকরি পাওয়া দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার। লিংকডইনকে শুধু চাকরি খোঁজার মাধ্যম হিসেবে না দেখে মানুষের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলায় মনোযোগী হন, এর সুদূরপ্রসারী উপকার পাবেন।

উপসংহার- বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ যত হচ্ছে ততই হার্ডকপির উপর নির্ভরশীলতা কমে যাচ্ছে। এখন কোম্পানি বা প্রাইভেট জবে প্রার্থীদের হার্ডকপি সিভি নেওয়া হয়না, তাদের বিষয়ে জানতে সিভি মেইল এবং লিংকডইন এর মত পেশাদার একাউন্ট থেকে কাজ এবং দক্ষতার বিষয়ে ধারনা নেওয়া হয়। আপনি যদি সঠিক এবং কার্যকরভাবে লিংকডইন প্রোফাইল তৈরি করেন তাহলে আপনার কাজের বিষয়ে দারুন সাহায্য পাবেন।

নিয়োগকর্তা আপনার বিষয়ে ইতিবাচক ধারনা পেলে তবেই আপনাকে নিয়োগ দেবেন। এবং যদি মার্কেটপ্লেস এর কাজ হয়, তাহলে আপনাকে কাজ দেবেন। যেহেতু কোটি কোটি প্রোফাইল, এখানে টিকে থাকতে হলে কৌশলী হতে হবে। আশা করি লিংকডউন ব্যবহারের সঠিক এবং কার্যকর কৌশল জানতে আর্টিকেলটি আপনার উপকারে আসবে।

এম এইচ/

আরও পড়ুন:

স্বাবলম্বী হওয়ার তাগিদ ও পরামর্শ দিয়েছেন রসুল (সা.)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *