শ্রীলঙ্কায় কারফিউ প্রত্যাহার
নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর বাংলা: শ্রীলঙ্কায় চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মুখে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ ও হামলাচেষ্টার জেরে রাজধানী কলম্বোয় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা কারফিউ প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর ৫টায় কারফিউ প্রত্যাহার করা হয় বলে জানিয়েছেন কলম্বো পুলিশের মুখপাত্র এসএসপি নিহাল থালডুয়া।এর আগে বিক্ষোভ ও সহিংসতার জেরে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে কারফিউ জারি করা হয়েছিল।
দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর রাজধানী কলম্বোসহ নুগেগোদা, মাউন্ট লাভিনিয়া এবং কেলানিয়া এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। এছাড়া বিক্ষোভ ও সহিংস ঘটনায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে নারীসহ ৪৫ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশের মুখপাত্র নিহাল থালডুয়া বলেন, বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনের সামনে জড়ো হন এবং তার বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেন। পুলিশ বাধা দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করেন। এ সময় তারা সেনাবাহিনীর একটি বাস, জিপ, থ্রি-হুইলার, দুটি ট্রাফিক মোটরসাইকেলসহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।
আটককৃতদের আদালতে নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন নিহাল থালডুয়া।
এ ঘটনায় পুলিশ সদস্য, স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) সদস্য এবং সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এদিকে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্সিয়াল মিডিয়া বিভাগ (পিএমডি) থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলাচেষ্টার ঘটনায় নেপথ্যে একটি চরমপন্থী গোষ্ঠী জড়িত। সংগঠিত চরমপন্থিদের একটি দল বিক্ষোভ করলে সেটি দাঙ্গায় রূপ নেয় এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট চলছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্য ও জ্বালানিসহ নিত্যপণ্যের চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সংকট মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে শত শত বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের বাসভবনের সামনে জড়ো হন এবং বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘ঘরে ফিরে যাও গোটা’, ‘গোটা একজন স্বৈরশাসক’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এতেই সংঘর্ষ শুরু হয়।
গত কয়েক বছর ধরেই ধুঁকছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। এর মেধ্যে করোনাভাইরাসের হানায় দেশটির অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলে পরিচিত পর্যটন খাত একেবারে ভেঙে পড়েছে। এ ঘটনায় শত শত কোটি ডলার রাজস্ব হারায় সরকার। পাশাপাশি সরকারের কর কমিয়ে দেওয়া, হঠাৎ কৃষিনীতি বদল, অনুৎপাদনশীল খাতে উচ্চসুদের ঋণের ব্যবহার ইত্যাদি কারণে বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটে পড়ে।
শ্রীলঙ্কার মোট বিদ্যুতের চল্লিশ শতাংশেরও বেশি আসে জলবিদ্যুৎ থেকে। কিন্তু সম্প্রতি বৃষ্টি না-হওয়ায় সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, জ্বালানির অভাবে বন্ধ রাখতে হচ্ছে তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। ফলে দিনে ১১ ঘণ্টার কম সময় বিদ্যুৎ পাচ্ছেন দেশটির জনগণ। এরই মধ্যে পেট্রোলের দাম ৯২ শতাংশ ও ডিজেলের দাম ৭২ শতাংশ বেড়ে গেছে। চলছে এলপি গ্যাস সংকটও।
এমন পরিস্থিতিতেও পাঁচ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ কমাতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে আমদানি নিষিদ্ধ রেখেছে কলম্বো। এতে যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তেমন আকস্মিক মূল্যও বেড়ে গেছে।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট সমাধানে প্রাথমিক অগ্রগতির আশা জাতিসংঘের