সৌর বিদ্যুতের ব্যবহারে পাহাড়ে কমেছে সুপেয় পানির কষ্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর বাংলা: খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে সুপেয় পানির কষ্ট দূর করতে বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি) আওতায় সৌর বিদ্যুতের ব্যবহারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন ও বিতরণের ফলে পাহাড়ে বসবাসকারীদের যুগের পর যুগ ধরে চলা পান্যযোগ্য পানির কষ্ট দূর হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে জেলার দুর্গম সাত গ্রামের বাসিন্দারা এখন সহজেই পাচ্ছেন সুপেয় পানি।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পাহাড় বেষ্টিত নয়নাভিরাম খাগড়াছড়ি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও সারা বছরই থাকে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। দুর্গম এলাকায় গভীর বা অগভীর নলকূপ না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নির্ভর করতে ভূপৃষ্ঠের পানির ওপর। বর্ষা বা শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির উৎস নষ্ট হয়। বাধ্য হয়ে তখন স্থানীয়দের দূষিত পানি পান করতে হয়। অথবা দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করেন। পাহাড়ের পথ ডিঙিয়ে খাবার পানি সংগ্রহের কষ্ট লাঘবে এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় কাজ শুরু হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, এলজিএসপির আওতায় খাগড়াছড়ির সাতটি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন দুর্গম গ্রামে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রতিটি গ্রামে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে ব্যয় হয় পাঁচ লাখ টাকা। সরাসরি সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ ফুট নিচ থেকে উঠছে পানযোগ্য পানি। বর্তমানে প্রতিটি প্রকল্প এলাকায় ২০০০ থেকে ৫০০০ লিটার পর্যন্ত পানি তুলে ট্যাংকে রাখা হয়। পরে এলাকাবাসী এসব পানি সংগ্রহ করেন।
স্থানীয় রহিমা বেগম, আবদুল হক, সাজাই মারমা, মনিকা ত্রিপুরার জানান, গ্রামে আগে পানির কোনও ব্যবস্থা ছিল না। দূরের ছড়া বা ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করতে হতো। সুপেয় পানির ছিল তীব্র সংকট। এখন সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ট্যাংকে পানি তোলা হচ্ছে। এসব ট্যাংক থেকে গ্রামের মানুষ পানি সংগ্রহ করতে পারছে। দূর হয়েছে অনেকদিনের কষ্ট।
উল্টাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় চাকমা বলেন, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেসব এলাকায় পানির কষ্ট বেশি, সেখানে এলজিএসপির প্রকল্পের মাধ্যমে সোলার প্যানেল স্থাপন করে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় এলাকার মানুষের পানির কষ্ট দূর হয়েছে।
জেলা ফ্যাসিলেটেটর অরুণদর্শী চাকমা জানান, পাহাড়ের অন্যতম সমস্যা সুপেয় পানির সংকট। দুর্গম এলাকায় পানির সংকট নিরসনে নবায়নযোগ্য সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে পানি তোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে, সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় পানি সরবরাহ হওয়ায় ১৫ হাজার মানুষের পানির কষ্ট দূর হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রকল্প আরও বাড়ানো হবে। দুর্গম এলাকায় পানির সংকট দূর করা হবে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর করতে পাহাড়ে সরকার বিভিন্নভাবে কাজ করছে। ডিপিএইসসির পাশাপাশি এলজিএসপিকে কাজে লাগিয়ে এবং নবায়নযোগ্য সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় পানির সংকট নিরসনের প্রকল্প আরও বাড়ানো হবে বলে জানান তিনি।
আরো পড়ুন:
ভোট দিতে লাঠিতে ভর করে ভোটকেন্দ্রে শতবর্ষী কদভানু