ঈদের হাসি, মাঠের মাতামাতি – হিড়িভিটায় এক অনন্য ফুটবল উৎসব
স্থান: হিড়িভিটা গ্রাম, পূর্বধলা উপজেলা, নেত্রকোনা জেলা
তারিখ: ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন
ঈদের ছুটি মানেই পরিবার, প্রিয়জন আর শেকড়ের টানে ফেরা। আর সেই ফেরা শুধু ঘরে নয়, হৃদয়ে–হৃদয়ে। নেত্রকোনার পূর্ব্ধলার প্রাণপ্রিয় গ্রাম হিড়িভিটা এবার ঈদের আমেজে পেয়েছিল এক নতুন মাত্রা। গ্রামের তরুণদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক অসাধারণ ও আনন্দঘন ফুটবল ম্যাচ — বিবাহিত বনাম অবিবাহিত।
যারা বছরের বড় একটা সময় জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকে, তারা সকলেই ঈদের ছুটিতে ফিরে আসে প্রিয় মাটিতে। শহরের কংক্রিট আর ব্যস্ততার বাইরে এই গ্রামেই যেন তাদের শেকড়, তাদের চিরন্তন সুখের ঠিকানা। আর সেই মিলনের আনন্দ উদযাপনের জন্যই আয়োজিত হয়েছিল এই ফুটবল ম্যাচ — কেবল খেলা নয়, এক হৃদয়ছোঁয়া মিলনমেলা।
খেলা নয়, ভালোবাসার উৎসব
এই ম্যাচে জয়-পরাজয়ের হিসাব খুবই গৌণ ছিল। আসল উদ্দেশ্য ছিল– একসাথে থাকা, একসাথে হাসা। বিবাহিতদের পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন একটু পরিণত বয়সের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরা, আর অবিবাহিত দলে ছিলেন প্রাণচঞ্চল তরুণরা। শুরু থেকেই দুই দলের খেলায় ছিল মজার ছলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, কিন্তু মনের গহিনে ছিল একটাই অনুভব– “আমরা এক, আমরা হিড়িভিটার সন্তান।”
আয়োজনে যাঁরা
এই হৃদয়ছোঁয়া আয়োজনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান জামাল হোসেন-এর, যিনি নিজের সময়, শ্রম আর ভালোবাসা দিয়ে গোটা আয়োজনটিকে বাস্তব রূপ দেন। তার পাশে ছিলেন আরও কিছু প্রাণবন্ত মানুষ: রাসেল, সালাম, হিমন, বাদশা, রাশিদ, বাদল, ইসলাম উদ্দিন, মঞ্জুল, তারামিয়া সহ গ্রামের সকল ছেলেরা। তারা সবাই মিলে শুধু একটি খেলার আয়োজন নয়, এক মধুর স্মৃতির জন্ম দিয়েছেন, যা অনেক দিন মনে থাকবে হিড়িভিটার মানুষদের।
পুরো গ্রাম যেন উৎসবের রঙে রঙিন
খেলার দিন সকাল থেকেই মাঠের চারপাশে ভিড় জমে যায়। ছোটরা দৌড়াদৌড়ি করে, বড়রা স্মৃতিচারণ করে, নারীরা দল বেঁধে খেলা দেখে আর হাসিমুখে উল্লাস করে। কেউ ঢোল বাজায়, কেউ মোবাইলে লাইভ করে ফেসবুকে প্রচার করে দেয় গ্রামজুড়ে উৎসবের খবর। পুরুষেরা একসাথে বসে পান-চা খায়, আর মাঠজুড়ে বয়ে চলে সেই পুরোনো দিনের চেনা আনন্দ।
শেষে জয় কার?
জয়ের কথা যদি বলেন — তাহলে বলতেই হয়, জয় হয়েছে ভালবাসার। জয় হয়েছে একতার, শিকড়ের, আর নিখাদ আনন্দের। খেলায় কেউ গোল করেছে, কেউ মিস করেছে; কিন্তু মাঠ ছাড়ার সময় সবার মুখেই ছিল এক গর্বিত হাসি। তারা জানে, এই দিনটা তারা গড়েছে নিজেদের হাতে, নিজেদের ভালোবাসা দিয়ে।
শেষ কথা
এমন আয়োজন শুধু খেলা নয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়:
“জন্মভূমির টান, শিকড়ের শক্তি, আর আপনজনের হাসি— এগুলোই জীবনের আসল রত্ন।”
হিড়িভিটার এই ঈদের খেলা আমাদের দেখিয়ে দিল, প্রযুক্তির এই যুগেও হৃদয়ের টানে, একতা আর ভালোবাসায় গ্রাম আজও বেঁচে আছে — আপন আলোয়, আপন গল্পে