লাইফস্টাইল

মেডিটেশনের উপকারিতা কত জানেন কি?

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর বাংলা: মেডিটেশনের উপকারিতা এখন প্রমাণিত সত্য। নিয়মিত মেডিটেশন চর্চা করলে একজন মানুষ মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন, প্রাণবন্ত ও প্রশান্ত থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, গভীর শিথিলায়ন ওষুধ ও সার্জারির মতোই দ্রুত ক্রনিক ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলের এনেসথেসিওলজি ও ব্যথা গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক ডা. ডেনিস টার্ক বলেছেন, মেডিটেশন শর্ট সার্কিটে করে ব্যথা বিনাশের সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার সঙ্গে জড়িত আবেগকেও বিনাশ করে।

বিভিন্ন গবেষণার বরাত দিয়ে মেডিটেশনের উপকারিতার নানা দিক নিয়ে লিখেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধ্যাপক তানিয়া আফরোজ।

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত চিকিৎসা মাসিক প্রিভেনশনের জুন, ১৯৯৭ সংখ্যায় সারা দেশে পরিচালিত জরিপের ফলাফল বলা হয়েছে, ৩০ শতাংশ আমেরিকান ব্যথানাশক সেবন করে, ৩৫ শতাংশ ব্যাথা অবহেলা করে, ২৭ শতাংশ মেডিটেশন করে ব্যথা কমায়। পঁচাত্তর শতাংশ আমেরিকান মনে করেন যে, ওষুধ ছাড়াই ব্যাথা উপশম সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ শতাংশ নাগরিক জানান যে, তাদের ডাক্তাররা তাদেরকে ওষুধ বাদ দিয়ে শিথিলায়নের মাধ্যমে ব্যথা উপশমের পরামর্শ দিয়েছেন।

মেডিটেশনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ২০১১ সালে যোগ-মেডিটেশনের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করেন, মেডিটেশন প্রশিক্ষণের জন্য দেশব্যাপী বরাদ্দ করেন ১০ মিলিয়ন পাউন্ড।

বাংলাদেশেও ৯০’র দশক থেকে জনপ্রিয় হতে শুরু করে ধ্যান বা মেডিটেশন। গত ৩০ বছরে মেডিটেশন বা ধ্যানচর্চায় সুস্থতার নজির স্থাপন করেন দেশের হাজার হাজার মানুষ। ২০১৩ সালে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এবং সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মিলে তৈরি জাতীয় চিকিৎসা নীতিমালায় বলা হয়, চিকিৎসকরা যেন স্ট্রেস-আক্রান্ত ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের নিয়মিত যোগ, মেডিটেশন, শিথিলায়ন, দমচর্চা ইত্যাদির পরামর্শ দেন। দেশের সচেতন চিকিৎসকরাও এখন মেডিটেশনের পাশাপাশি ব্যথা উপশম ও দ্রুত নিরাময়ে মেডিটেশনের পরামর্শ দিচ্ছেন।

এছাড়া ২০১৫-১৬ সালে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও যোগ-মেডিটেশনের শারীরিক-মানসিক উপকারিতা বিবেচনা করে এ সেবা থেকে স্থায়ীভাবে ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং একইসঙ্গে যোগকে দাতব্য কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

দুঃখজনক হলো, আমাদের দেশে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে মেডিটেশনের ওপর আবারও ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা উচ্চ রক্তচাপ চিকিৎসা নীতিমালার (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন প্রণীত ‘ন্যাশনাল গাইডলাইন ফর ম্যানেজমেন্ট অব হাইপারটেনশন ইন বাংলাদেশ) বক্তব্যের সঙ্গে একেবারেই সাংঘর্ষিক।

২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘বৈশ্বিক এই দুর্যোগকালে জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোবল অটুট রাখার স্বার্থে মেডিটেশন সেবার ওপর মূসক অব্যাহতি বলবৎ রাখার প্রস্তাব করছি‘।

এর ফলে নিয়মিত মেডিটেশন চর্চাকারীর চিকিৎসা ব্যয় কমে যায়। আর এর প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে আরও দরিদ্র হয়ে পড়া বা নিঃস্ব হয়ে পড়া জনগোষ্ঠী দেশের বোঝাতে রূপান্তরিত হয়।

কাজেই, চিকিৎসা ব্যয় কমে গেলে দেশের জিডিপি বাড়বে। তাছাড়া ভ্যাট অব্যাহতির মাধ্যমে মেডিটেশনকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া গেলে বিপুল জনগোষ্ঠীর প্রশান্তি বাড়তে থাকবে যার প্রভাব পড়বে আমাদের সামাজিক জীবনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *