মাটির গান ভাওয়াইয়া
মোস্তফা মানিক, সুখবর বাংলা: ভাওয়াইয়া মূলত বাংলাদেশের রংপুর এবং ভারতের কোচবিহার ও আসামের গোয়াল পাড়ায় প্রচলিত এক প্রকার পল্লীগীতি। এ সকল গানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গানগুলোতে স্থানীয় সংস্কৃতি, জনপদের জীবনযাত্রা, তাদের কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক ঘটনাবলী ইতাদির সার্থক প্রয়োগ ঘটেছে। যেমন- গরুর গাড়ির চালক বা গাড়িয়ালকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়ারে, যেদিন গাড়িয়াল উজান যায়’। আবার রংপুরের ঐতিহ্যবাহী চিড়িয়াখানা নিয়ে, ‘মিয়া ভাই একনা কতা কবার চাও, অংপুর মুই যাবার চাও, চিড়িয়াখানা দেখিয়া আনু হই।’
ভাওয়াইয়া শব্দের উৎপত্তি: ভাওয়াইয়া কথাটির উৎপত্তি সম্পর্কে অনেক মতবাদ রয়েছে। ভাব মনের অনুভুতি ভাও +ইয়া। অর্থাৎ যে সমস্ত গানের মধ্যে দিয়ে মনের অনুভুতি প্রকাশ করা হয় ।
ভাওয়াওইয়া গানের উৎপত্তিঃ ভাওয়াওইয়া গানের আকরভুমি রংপুর, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে নদী নালা কম থাকায় গরুর গাড়ীতে চলাচলের প্রচলন ছিল, আর গরুর গাড়ীর গাড়োয়ান রাত্রে গাড়ি চালানো অবস্থায় বিরহ ভাবাবেগে কাতর হয়ে আপন মনে গান ধরে উচু – নিচু রাস্তায় গাড়ির চাকা পড়লে তার গানের সুরে আধ- ভাঙ্গা ভাজ পড়ে, এই রকম সুরে ভাঙ্গা বা ভাজ পড়া গীতি রীতিই ভাওয়াইয়া গানে লক্ষণীয়। প্রেম – বিয়োগে উদ্বেলিত গলার স্বর জড়িয়ে যে রকম হয় সে রকম একটা সুরের ভাজ উঁচু স্বর হতে নিচের দিকে নেমে আসে, সুরে ভাজ পড়া ভাইয়াইয়া গানের স্বকীয় বৈশিষ্ট , বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক শাহানেওয়াজ, উত্তরের সুর ছবিতে একজন ভাওয়াইয়া গায়কের জীবন চিত্র তুলে ধরা হয়, এখানে উত্তর বাংলাদেশের দারিদ্র্যতার কারনে ধীরে ধীরে ভাওয়াইয়া গানের অবলুপ্তি তুলে ধরা হয়, চলচ্চিত্রটি ১৮তম কলকাতা, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়। বিশিষ্ট ভাওয়াইয়া গানের শিল্পীদের নামের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো- আব্বাসউদ্দিন আহম্মেদ ভাওয়াইয়া সম্রাট, প্রতিমা বড়ুয়া পাণ্ডে, ভাওয়াইয়া সম্রাজ্ঞী, কল্পনা পাটোয়ারি, গঙ্গাচরন, আলাউদ্দিন সরকার, কাছিমুদ্দিন, হরলাল রায়, মহেশ্চন্দ্র রায় রথীন্দ্রনাথ রায়, সুরেন বসুনিয়া, গিদাল নজরুল ইসলাম, নাদিরা বেগম স্বপ্না রায়, মোস্তফা জামান আব্বাসি, ফেরদৌসি রহমান, প্রমুখ শিল্পীদের গায়কির মধ্য দিয়ে ভাওয়াইয়া গানের বিস্তার লাভ করছে। পিঠা পুলির উৎসবে ভাওয়াইয়া গানের প্রভাব রয়েছে, তেমনি একটি গান উল্লেখ করা হল- মনটায় মর পিঠা খাবার চাই।
আরো পড়ুন: