মহানবী (সাঃ) এর বিদায় হজের ভাষণ
মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ–এর বিদায় হজের ভাষণ।
আরাফাতের ময়দানে প্রদত্ত এই ভাষণ শুধু মুসলমানদের নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও চিরন্তন মানবাধিকার ঘোষণা।
এসো, এই মহামূল্যবান বাণীগুলো হৃদয়ে ধারণ করি।
আরাফাতের প্রান্তর। ১০ হিজরি। লক্ষ লক্ষ সাহাবি সমবেত হয়েছেন। রৌদ্রতপ্ত মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে মানবতার মুক্তির শিক্ষায় ভরে উঠলো নবীজির কণ্ঠ।
নবী ﷺ বললেন-
“হে মানুষ!”
তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় করো। আজকের এই দিন, এই মাস, আর এই শহর যেমন পবিত্র—তেমনি তোমাদের জীবন, সম্পদ ও সম্মান একে অপরের কাছে পবিত্র।
তোমরা কারো হক নষ্ট করবে না, কারো ওপর জুলুম করবে না।
নবী ﷺ জানিয়ে দিলেন-
মানুষের রক্ত, সম্পদ, ইজ্জত—সবই নিরাপদ।
কেউ কারো ক্ষতি করার অধিকার রাখে না।
এরপর তিনি জাহিলিয়াত যুগের সমস্ত রক্তপাতে প্রতিশোধ নেওয়ার নিয়ম ও সুদ প্রথা সম্পূর্ণ বাতিল ঘোষণা করলেন। এবং উদাহরণ হিসেবে প্রথমেই নিজের পরিবারের সুদ বাতিল করলেন।
পরবর্তী অংশে নবী ﷺ নারীদের অধিকার সম্পর্কে অসাধারণ বাণী দিলেন-
“হে মানুষ! নারীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। তারা তোমাদের সঙ্গিনী, তোমাদের অমানত। তোমাদের তাদের ওপর অধিকার আছে, আবার তাদেরও তোমাদের ওপর অধিকার আছে।”
এভাবে তিনি পরিবার, সমাজ ও বিবাহিত জীবনের ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার পথ দেখালেন।
তারপর নবী ﷺ বললেন-
“আমি তোমাদের কাছে এমন একটি অমূল্য জিনিস রেখে যাচ্ছি, তা যদি আঁকড়ে ধরো—তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব—কুরআন।”
এরপর তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন মানবজাতির সর্বোচ্চ বার্তা—সমতা ও ভ্রাতৃত্ব:
“মনে রেখো, সব মানুষই আদমের সন্তান। আর আদম সৃষ্টি হয়েছেন মাটি থেকে। কোনো আরবের ওপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, কোনো অনারবের ওপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই—শুধু তাকওয়া ছাড়া।”
তিনি জানিয়ে দিলেন-
মুসলমান মুসলমানের ভাই। কেউ কারো ওপর জুলুম করবে না। সমাজে দয়া, ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়বিচারই হবে জীবনের মূলনীতি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবাণী ছিল-
শয়তান বড় বিষয়ে তোমাদের বিপথে নিতে পারবে না, তবে ছোট ছোট কাজে সে প্রবেশের চেষ্টা করবে। তাই সে বিষয়ে থেকো সাবধান।
সর্বশেষে নবী ﷺ বললেন-
“হে মানুষ! আমি কি আল্লাহর বাণী তোমাদের কাছে পৌঁছে দিলাম?”
সমবেত সাহাবারা একসাথে বললেন-
“জি হ্যাঁ, আপনি পৌঁছে দিয়েছেন।”
তখন নবী ﷺ আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন-
“হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো।”
এই ভাষণ দিয়েই সম্পূর্ণতা পেল মানবতার সবচেয়ে সুন্দর, ন্যায়নিষ্ঠ ও পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা—ইসলাম।