✨ সুরা আল-মুলকের ফজিলত
সুরা আল-মুলক, পবিত্র কুরআনের ৬৭তম অধ্যায়, যার প্রতিটি আয়াতে রয়েছে গভীর শিক্ষা, আল্লাহর মহিমা ও ক্ষমতার ঘোষণা। এ সূরার আরবি নামের অর্থ “রাজত্ব” বা “পরম কর্তৃত্ব”, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—এই আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী, আমাদের জীবন-মৃত্যু, সবকিছুই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। নবী করিম ﷺ সুরা মুলককে এত বেশি গুরুত্ব দিতেন যে, তিনি নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে এ সূরা তিলাওয়াত করতেন। হাদিসে এসেছে, সুরা মুলক তার পাঠকারীর জন্য কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার মাধ্যম হবে। কিয়ামতের দিন এটি তার পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে এবং আল্লাহর বারবার কাছে অনুরোধ করবে যাতে ওই ব্যাক্তিকে মুক্তি দেয়া হয়।
এই সূরার শক্তি এমন যে, এটি পাঠ করলে মুমিনের হৃদয়ে জন্ম নেয় বিনয়, জাগে তাকওয়া। সুরায় বলা হয়েছে আসমানের সাত স্তর সৃষ্টি, তারকারাজির সৌন্দর্য, আর শয়তানদের ওপর নিক্ষেপিত আগুনের শিখার কথা। এই সব উদাহরণ আল্লাহর অসীম শক্তি ও সুচিন্তিত সৃষ্টিকে সামনে তুলে ধরে। মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়—জীবন কিন্তু মজা করার জন্য নয়; বরং পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সৃষ্টি। কে ভালো আমল করবে, আর কে শুধু দুনিয়ার পেছনে ছুটবে—এই সূরাই আমাদের চোখ খুলে দেয় সেই সত্যের দিকে।
সুরা মুলকের প্রতিটি আয়াত আমাদের অনুপ্রাণিত করে দুনিয়া ও আখিরাতের ভারসাম্য বজায় রাখতে। এখানে বলা হয়েছে মানুষের শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, হৃদয়—সবই আল্লাহর নেয়ামত; এবং Judgment Day-এ এর প্রতিটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। তাই এই সূরার শিক্ষা হলো—কেউ একা নয়, কেউ অসহায় নয়; মানুষ যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তাকে দেখছেন, জানেন, এবং তার জন্য হিসাব রাখছেন। যারা আল্লাহকে ভয় করে, গুনাহ থেকে বাঁচে, তাদের জন্য রয়েছে বেহেশতের সুসংবাদ। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য রয়েছে আগুনের সতর্কবাণী, যাতে মানুষ পথ সোজা করতে পারে।
এই সূরার একটি বার্তা বিশেষভাবে মনোযোগযোগ্য—“তোমরা কি আকাশের দিকে তাকাওনি, কেমন করে বারবার নিখুঁতভাবে আল্লাহ তা নির্মাণ করেছেন?” এই আয়াত আমাদের শেখায়—মানুষের জ্ঞান সীমিত, কিন্তু আল্লাহর জ্ঞান সীমাহীন। এই উপলব্ধি একজন মুমিনকে করে আরও বিনয়ী, আরও মনোযোগী, আরও কৃতজ্ঞ। নিয়মিত সুরা মুলক পড়লে মানুষের অন্তরে জন্ম নেয় কুরআনের প্রতি ভালোবাসা, আল্লাহর প্রতি ভরসা, আর মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য প্রস্তুতি।
🟢 সমাপ্তি
সুরা আল-মুলক শুধু ৩০টি আয়াত নয়—এটি মুমিনের জীবনের ঢাল, কবরের অন্ধকারে আলো, আর আখিরাতের মুক্তির আশা। তাই প্রতিদিন ঘুমানোর আগে সুরা মুলক পড়া শুধু সুন্নতই নয়, বরং আত্মার শান্তি ও নিরাপত্তার এক অনন্য উপায়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সূরার শিক্ষা বুঝে আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।